হে তরুণ সমাজ ভেবে দেখো একবার!

*হে তরুণ সমাজ! ভেবে দেখো একবার।*

*✍️ তাওহীদুর রহমান।*

প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তরুণসমাজকে জাতির মেরুদণ্ড,পতাকাবাহী ও অধিনায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়।ইতিহাসের পাতায় এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। অনুরূপভাবে মনোনীত ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের পিছনে তরুণ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, বেলাল (রযীয়াল্লাহু আনহুম) দের মতো তরুণ সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডাকে সাড়া দিয়ে সংগ্রাম করে ইসলামের বিজয়ী পতাকা সারাবিশ্বে উড্ডীন করে গেছেন।
কিন্তু সেই তরুণ সমাজ আজ কোথায়?কেন আজ সেই ইসলামের বিজয়ী পতাকা লুণ্ঠিত হতে চলেছে। কেন আজ বিশ্ববাসী সেই দলের আশা করে বসে আছে যারা বিশ্ববাসীর পরিচালক হবে এবং তারা তাদের অনুসরণ করবে ।
হে তরুণ সমাজ!তুমি কখনো ভেবে দেখেছো?এই দুর্দশার কারণ কি?
এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তরুণ সমাজ নিজেকে ভালোভাবে চিনতে পারেনি, নিজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি যে, সমাজের, জাতির তাদের কত প্রয়োজন রয়েছে।তারা তাদের নিজের দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গেছে।
হে তরুণ সমাজ!তুমি কি একবার ভেবে দেখেছো?ইসলামে তোমার কত মর্যাদা রয়েছে?
হে তরুণ সমাজ!তুমি কি একবার ভেবে দেখেছো?
আল-কোরান তোমার সংবাদ বর্ণনা করেছে।(১৮:১৩)
হে তরুণ সমাজ! তুমি কি একবার ভেবে দেখেছ?
আল-হাদিস তোমার মর্যাদা বর্ণনা করেছে।(সহীহ বুখারী ৬৬০)
তুমি কি এসব ভুলে গেছো?

এসো তরুণ ভাইয়েরা জেগে উঠি নিজের যৌবন কালের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করি এবং কর্ম জীবনে নিজেকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। তুমি কি নবীর সেই বাণী ভুলে গেছো? যেখানে বলা হয়েছে সাত ধরনের ব্যক্তি আরশের ছায়া পাবে তাদের মধ্যে এক ধরনের ব্যক্তি হচ্ছে সেই যুব সমাজ যারা তাদের যৌবনকালকে আল্লাহর ইবাদতে কাটাবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّه.
যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
তন্মধ্যে এক ব্যক্তি হচ্ছে
شَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّهِ.
সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে।( সহীহ বুখারী: ৬৬০)

হে তরুণ সমাজ! তুমি কি কখনো ভেবেছো? তোমার যৌবন কালের হিসাব দিতে হবে, কিভাবে উপার্জন করেছ?কিভাবে খরচ করেছ? তুমি তোমার জ্ঞান অনুযায়ী আমল করেছ কিনা? এর হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন এক পাও এগোতে দেবে না।তার হিসাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছ তো?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

"‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ.

কিয়ামাত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে।
(তিরমিজী  ২৪১৬ হাদিসের মানঃ সহীহ)

আমরা তরুণ সমাজ বর্তমান এই অবসরকালে নিজের মূল্যবান সময়কে ঘুরে বেড়িয়ে, ঘুমিয়ে, ফেসবুক, ওয়াটস্যাপ, টুইটার ইত্যাদির মত সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে জুড়ে থেকে অথবা আড্ডাবাজি করে পার করে দিচ্ছি। *আমরা যদি এই সময়ে একাকী বসে কিছুক্ষণ ভাবি যে, আমি আমার অতীত জীবনে কি করেছি? বর্তমানে কি করছি? এবং ভবিষ্যতে কি করব? এটাও ভাবি যে আমার পার হয়ে যাওয়া দিনগুলিতে কি কি কাজ করেছি? তাতে কতটা লাভ হয়েছে এবং কতটা ক্ষতি হয়েছে?* সেই ক্ষতি যদি পূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে এখন থেকেই  সেটা পূরণ করার দৃঢ় সংকল্প করি তো অবশ্যই কিছু ফলপ্রসূ হবে।
এবং সদা সর্বদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই অমূল্য বাণী সবসময় মনে রাখতে হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
اغْتَنِمْ خَمْسًا قبلَ خَمْسٍ : شَبابَكَ قبلَ هِرَمِكَ ، وصِحَّتَكَ قبلَ سَقَمِكَ ، وغِناكَ قبلَ فَقْرِكَ ، وفَرَاغَكَ قبلَ شُغْلِكَ ، وحَياتَكَ قبلَ مَوْتِكَ .
(صحيح الترغيب: 3355)

পাঁচ জিনিসের পূর্বে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। ১. যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে। ২. সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে। ৩. সচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্যতা আসার আগে। ৪. অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে। ৫. এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।

অতএব এই অবসর সময়ে সবচেয়ে বড় কাজ যেটা করা যেতে পারে। সেটা হচ্ছে নিজের ইসলাহ করা অর্থাৎ আল্লাহর দিকে ফিরে নিজেকে সংশোধন করে নেওয়া, সমাজে প্রচলিত ভুলত্রুটির সংশোধন করা এবং সমাজকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যে সমাজ কেন এত পিছিয়ে? সমাজের শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে কিভাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? আমরা মুসলিম জাতি কেন এত পিছিয়ে পড়ে আছি? সেটা নিয়ে ভাবতে হবে এবং বড়দের সাথে পরামর্শ করে এর জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়াও এই সময়ে বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করতে হবে বিশেষ করে ইসলামী বইপুস্তক যাতে করে আমার ধর্ম এবং দ্বীন ঠিক থাকে। বর্তমান সময়ে দ্বীনের উপর অবিচল থাকা খুবই মুশকিল এর জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। বিজাতিদের সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে। যে যুবক বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করবে সে ইহকাল ও পরকাল দুটোই হারাবে।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে দুআ করি হে আল্লাহ! আমরা যেন যৌবন কালকে তোমার বিধান অনুযায়ী পার করতে পারি এবং দ্বীনের উপর অবিচল থাকতে পারি। আমীন।।

            *হে যুবক! জেগে ওঠো একবার*,
           *নাহলে আফসোস করবে শতবার*।
                   🙏ভুলত্রুটি মার্জনীয় 🙏

সঙ্গ দোষে শিলা ভাসে।

                      *সঙ্গ দোষে শিলা ভাসে*

                                             🖋তাওহীদুর রহমান।

যেমন গাছের জড় মাটির ভিতর প্রবেশ করে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তেমনি মানুষের কিছু বদঅভ্যাস ও খারাপ চরিত্র দেহে প্রবেশ করে ছড়িয়ে যায়। কেননা মানুষের স্বভাব খুব বেপরোয়া হয়ে থাকে এবং তাদের ইচ্ছা ও আকর্ষণ সেই পক্ষিদলের মতো  হয়ে থাকে যারা একে অপরের সাদৃশ্য অবলম্বন করে চলার চেষ্টা করে। আর এটা আমাদের মধ্যেও হয়ে থাকে। 

 অতএব আমাদেরকে সেই সব লোকের সঙ্গ ছাড়তে হবে যারা আমাদের সময় ও অর্থ নষ্ট করে ও উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে, আর সেই পথে চলতে হবে যারা আমাদের ইচ্ছা পূরণে সাহায্য করবে এবং ভালো কাজের জন্য উৎসাহ জাগাবে ও বিপদে-আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।

এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন।

 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْمِسْكِ، وَكِيرِ الْحَدَّادِ، لاَ يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ الْمِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ، أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ، وَكِيرُ الْحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً ‏"‏‏

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিস্‌ক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।

  সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২১০১

অন্যত্রে বলেন                                                               

 "‏ لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ ‏"‏ ‏

নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়।

  সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৩২

হাদিসের মান: হাসান হাদিস

উক্ত হাদীসগুলি থেকে বোঝা গেল যে আমাদের সাথী ও সহচর যেন মমিন ও আল্লাহ ভীরু হয়।আর যদি এরকম না হয় তাহলে তাকে ভালো পথের দিকে আহবান করতে হবে নতুবা তার সঙ্গ ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এক সঙ্গীর প্রভাব অপর সঙ্গীর উপর পড়ে থাকে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন।  

" الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‏"‏

 মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।

  

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৩৩

হাদিসের মান: হাসান হাদিস

অনুরূপভাবে এটাও বলা হয়ে থাকে যে।

مَنْ جَالَسَ المُغَنِّنِينَ غَنَّى               ومَن جَالَسَ المُصَلِّينَ صَلَّى

 যে ব্যাক্তি গায়কের সহচর লাভ করবে সে গান গাইবে। আর যে ব্যাক্তি নামাজির সহচর লাভ করবে সে নামাজ পড়বে। 

অতএব আমাদের জন্য জরুরী যে আমরা যেন সবসময়ই সৎসঙ্গীর সহচর লাভ করি। কারণ এরজন্যই কারও জীবন ধন্যও হয়েছে আবার কারও জীবন ধংসও হয়েছে। 

আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করেন আমিন।।।।